সালাম বিনিময় বা সম্ভাষণের ইসলামী পদ্ধতি

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ।এখানে সব সমস্যার সমাধান রয়েছে।তেমনি ভাবে আমরা কিভাবে পরষ্পরের মধ্যে সম্ভাষণ বিনিময় করবো তাও উল্লেখ রয়েছে।তাই আমি তা নিচে বর্ণনা করছি:
সালাম আরবী শব্দ।এর অর্থ শান্তি,প্রশান্তি কল্যাণ,দোআ,আরাম,আনন্দ,তৃপ্তি।
সালাম একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক অভিনন্দন সুলভ শান্তিময় উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামী অভিবাদন।

সালামের উৎপত্তি
আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আদম (আ:)কে সালামের শিক্ষা দেন।
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা:)বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আদম (আ:)কে সৃষ্টি করে বললেন, যাও ফেরেশতাদের দলকে সালাম দাও এবং মন দিয়ে শুন তার তোমার সালোমের কি জবাব দেয়।এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম।তাই আদম (আ:) গিয়ে বললেন,
আস্‌সালামু আলাইকুম।
ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন,
আস্‌সালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
ফেরেশতাগণ রাহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করলেন।(মিশকাত হা/৪৬২৮,শিষ্টাচার অধ্যায়,সালাম অনুচ্ছেদ)।
অন্যান্য নাবীদের জীবনে সালামের প্রচলন:
অবশ্যই আমার প্রেরীত ফেরেশতারা ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন, তারা বললেন,সালাম তিনিও বললেন,সালাম (সুরা হুদ আয়াত নং-৬৯)
তেমনি নূহ(আ:) এর ক্ষেত্রে,
হে নুহ!আমার পক্ষ হতে সালাম এবং আপনার নিজের এবং সঙ্গীয় সম্প্রদায়গুলোর উপর বরকত সহকারে অবতরণ করুন। (সুরা হুদ ৪৮)
অন্যের গৃহে গিয়ে সালাম না দিয়ে প্রবেশ নিষেধ। কুরআনে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন,
হে মুমিনগণ তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতিত অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না দাও ।এটাই তোমাদের জন্য উত্তম।যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। (সুরা নূর ২৭)
এ থেকে বুঝা গেল যে,
অন্যের বাড়িতে গিয়ে সরাসরি প্রবেশ না করে তাদের সাথে আগে আলোচন করা তারপর তাদের সালাম দেয়া উচিত। হাদীসে অন্যের বাড়িতে গিয়ে সালাম দিতে বলা হয়েছে তিনবার ও অনুমতি প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। অনুমতি না দিলে ফেরত আসতে বলা হয়েছে।(তিরমিযী)
আল্লাহ জান্নাত বাসীদেরকে সালাম দ্বারা আপ্যায়িত করবেন,
এদিন জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে।সেখানে তাদের জন্য থাকবে ফলমূল আর যা চাইবে।করুনাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে “সালাম”।
সালামের গুরুত্ব ও ফযীলত:
একদা এক ব্যক্তি নাবী (সা:) এর নিকটে এসে বললেন, আস্‌সালামু আলাইকুম। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকী লেখা হয়েছে।এরপর আরেক ব্যক্তি এস বলল, ওয়া রাহমাতুল্লাহ নাবী তার জওয়াব দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকী লেখা হয়েছে। অত:পর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন ওয়া বারাকাতুহু। রাসুলুল্লাহ তারও জওয়াব দিয়ে বললেন, লোকটির ৩০টি নেকী লেখা হয়েছে। (মিশকাত হা/৪৬৪৪)
হাদীসে আছে, পারষ্পরিক সালাম বিনিময়ে পারষ্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।(মিশকাত হা/৪৬৩১)
এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক্ক রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল যখন তার সাথে সাক্ষাত হবে তখন তাকে সালাম দিবে।(মিশকাত হা/৪৬৩০)
সালাম না দেয়া একটি কৃপণতা। হাদীছে আছে যে, যে সালাম দিতে কার্পন্য করে তার চেয়ে বেশী কেউ কৃপণ নয়।
(মিশকাত হা/৪৬৬৫)
সালাম দানের পদ্ধতি:
সালামের সর্বনিম্ন বাক্য হচ্ছে
আস্‌সালামু আলাইকুম।
বর্ধিত করে
আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু।
সালামের জওয়াব দেয়া ওয়াজিব। সালামের উত্তরে সালাম দাতার বাক্যের চেয়ে বর্ধিত করে বলা উচিত।
সালাম দানের পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রা:)হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ছোট বড়কে সালাম দিবে,পথচারী বসা ব্যক্তিকে এবং কমসংখ্যক লোক বেশী সংখ্যক লোকদেরকে সালাম প্রদান করবে।(মিশকাত হা/৬৪৩২-৩৩)
অন্য এক হাদীসে আছে, আরোহী ব্যক্তি পায়ে চলা ব্যক্তিকে সালাম দিবে।
এ নীতি মালা রাসূলুল্লাহ সা: নিজে অনুসরণ করতেন, একদা কতিপয় বালকের নিকট গিয়ে গমন করলে তিনি তাদের সালাম দনে।তিনি বয়সে বড় হওয়া সত্তেও তারা সংখ্যায় বেশী হওয়ায় তাদের সালাম দিলেন।(মিশকাত হা/৪৬৩৪)
তাই শিক্ষকের উচিত ক্লাসে ঢুকে সালাম দেয়া।অথচ আমাদের সমাজে দেখা যায় উল্টো।
এই নীতি মহিলাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য্।নাবী সা: একদা কতিপয় মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি তাদের সালাম করলেন। (মিশকাত হা/৪৬৪৭)
অন্য ধর্মালম্বীকে সালাম দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে মতভেদ আছে।তবে তারা সালাম দিলে তাদের উত্তরে শুধু “ওয়া আলাইকুম” বলতে হবে,এর চেয়ে বেশী নয়।(মিশকাত হা/৪৬৩৭-৩৮)
সালামের বাক্যগুলো বিকৃত করা হারাম। যেমন স্লামালেকুম, সালাম কুম, সামেকুম ।
হাদীসে আছে,
নাবী সা: বলেন, ইহুদীর যখন তোমাদের সালাম দেয় তখন তারা বলে, আস-সামু আলাইকা (অর্থ: তোমার ধ্বংস হোক।) এর জওয়াবে তুমি বলবে ওয়া আলাইকা।(মিশকাত হা/৪৬৩৬)
সালাম করার সময়:
একজন মুসলমানের সাথে অন্য মুসলমানের সাক্ষাত হওয়ার সাথে সাথে সালাম বিনিময় হবে।রাসূল সা: বলেন, কথাবার্তার আগেই সালাম করবে।
নাবী কারীম (সা:) বলেন, যখন তোমাদের কারো কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত হয় তখন সে যেন তাকে সালাম করে অত;পর যদি তাদের উভয়ের ব্যবধানে কোন বৃক্ষ বা প্রাচীর বা পাথরের আড়াল পড়ে পরে তাদের সা্ক্ষাত হলেও যেন তারা সালাম করে।
তাই কেউ বাড়িতে প্রবেশ করলেও তার উচিত পরিবারে সালাম প্রদান করা।
কারো মাধ্যমে সালাম প্রদান:
দূরে থাকা কাউকে কারো মারফত সালাম দেয়া ইসলামে শরীয়াত সম্মত।
হাদীছে আছে, জনৈক ব্যক্তি তার দাদা থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন, একদিন আমার পিতা আমাকে নাবীর (সা:) কাছে পাঠালেন এবং বললেন, তাকে আমার সালাম জানাবে।আমি তার খিদমতে এসে বললাম আমার পিতা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন, তখন তিনি তার উত্তরে বললেন, আলাইকা ওয়া আলা আবীকাস সালাম।(অর্থ: তোমার উপর ও তোমার পিতার উপর আমার সালাম) (মিশকাত হা/৪৬৫৫)
মুছাফাহার গুরুত্ত্ব:
ইসলামী শরীয়াত সালামের পাশাপাশি মুছাফাহার গুরুত্ব রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যখন দুজন মুসলমান পরষ্পর সাক্ষাত হয় এবং তারা মুছাফাহা করে, পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদরে উভয়ের গুণাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (আবুদাউদ হা/৫১৮৬)
সালাম নিয়ে কিছু কুসংষ্কার:
  • সালামের বাক্যগুলো বিকৃত করে পড়া।
  • পায়ে হাত দিয়ে সালাম বা কদমবুছি করা।যা আমাদের ইসলাম ধর্মের কোন অংশ নয়।এটা মূলত হিন্দু সমাজ থেকে আমাদের সমাজে প্রবেশ করেছে।
  • সালামের পরে মুছাফাহা করার পর বুকে হাত দেয়া।এটার শরীয়াতে কোন অস্তিত্ত্ব নেই।
  • সালামের উত্তর সঠিক ভাবে না দেয়া।
তাই আমরা আমাদের সমাজে,পরিবারে,অফিসে সালামের প্রচলন করব। সেই সাথে আমরা ইসলামকে মেনে চলব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Abdul Kadir

Assalamu Alaikum

“ইসলামে সালাতের গুরুত্ব এতই সুমহান যে বসে থেকে সালাতের জন্য অপেক্ষা করাও একটি ইবাদাত!” — শাইখ সালিহ আল ফাওজান [ফাদাইল আস সলাহ, পৃ ১৩]