বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭

শাওয়ালের ছয় রোযার বিস্তারিত মাসায়িল

শাওয়ালের ছয় রোযার বিস্তারিত মাসায়িল
--------------------------------------------
রামাজান পরবর্তী শাওয়াল মাসের বিশেষ আমল হচ্ছে--এ মাসে ছয়টি নফল রোযা রাখা। এ রোযাকে “শাওয়ালের ছয় রোযা” বলা হয়।
মাহে রামাজানের ফরজ রোযা পালনের পর শাওয়াল মাসে এ ছয়টি রোযা রাখা নফল বা মুস্তাহাব। তবে এ রোযা রাখা নফল বা মুস্তাহাব হলেও এর ফজীলতকে রামাজানের রোযার সাথে যুক্ত করে এক বছরের রোযার ছাওয়াবের কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ ছয় রোযার অনন্য ফজীলতের তথা রামাজানের রোযার ন্যায় ফজীলত লাভের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
শাওয়ালের এ ছয় রোযার ফজীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে, হযরত আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
“যে ব্যক্তি রামাজানের রোযা রাখল, অতঃপর তার পিছে পিছে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখল, তা পূর্ণবছর রোযা রাখার মতো গণ্য হবে। ” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৪/ জামি‘ তিরমিযী, হাদীস নং ৭৫৯/ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩৩ প্রভৃতি)
অন্য হাদীসে রয়েছে, “যে ব্যক্তি মাহে রামাজানের রোযা শেষ করে (শাওয়াল মাসে) ছয়দিন রোযা রাখবে, সে যেন পুরো বছর রোযা রাখলো।” (মুসনাদে আহমাদ, ৫ম খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা/ সুনানে দারিমী, হাদীস নং ১৭)
অপর হাদীসে রয়েছে, “রামাজানের রোযা ১০ মাসের রোযার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোযা ৬০দিন বা দুই মাসের রোযার সমান। এই হলো এক বছরের রোযা। ” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
এ হাদীসসমূহে বর্ণিত উক্ত রামাজান ও শাওয়ালের রোযাসমূহের ছাওয়াব এভাবে নির্ণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরাহ আন‘আমের ১৬০ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন-- “যে ব্যক্তি নেক কর্ম করবে, তার জন্য তার দশ সমতুল্য প্রতিদান রয়েছে।” সে হিসেবে রামাজানের ত্রিশ রোযায় ৩০০ রোযার (দশগুণ তথা ১০ মাসের রোযার) ছাওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোযায় ৬০ রোযার (২ মাসের রোযার) ছাওয়াব লাভ হয়। এভাবে (রামাজানের ৩০ রোযা এবং. শাওয়ালের ৬ রোযা মোট ৩৬ রোযা দশ দিয়ে গুণ দিলে) ৩৬০ রোযার সমান হয়ে যায়। আর চান্দ্র বর্ষ অনুযায়ী প্রায় ৩৬০ দিনে (বা ৩৫৪ দিনের কিছু বেশী) এক বছর হয়। সুতরাং এর মাধ্যমে পূর্ণ এক বছর রোযা রাখার ছাওয়াব লাভ হয় ।
তবে উল্লেখ্য যে, কেবল মাত্র তারাই শাওয়ালের ৬ রোযার ছাওয়াব পরিপূর্ণভাবে লাভ করবেন--যারা রামাজানের রোযা সঠিকভাবে পালন করে তারপর শাওয়ালের রোযা রাখবেন। হাদীস শরীফে ثُمَّ أَتْبَعَهُ বলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তির রামাজানের রোযার কাজা আছে, তিনি প্রথমে রামাজানের কাজা আদায় করে নিবেন। তাহলেই উক্ত রোযার পরিপূর্ণ ফজীলত লাভ করবেন। তবে যদি কোন সঙ্গত উজরের কারণে তা সেভাবে আদায় করা সম্ভব না হয়, সেটা ভিন্ন কথা। সেক্ষেত্রে আগে শাওয়ালের ছয় রোযা রেখে তারপর রামাজানের কাজা রোযা রাখা যাবে।
তবে শাওয়ালের রোযার সাথে কাজা রোযার নিয়ত করা যাবে না। কেননা, কাজা রোযা হচ্ছে ফরজ রোযা, আর শাওয়ালের রোযা হলো নফল বা মুস্তাহাব রোযা। আর ফরজের সাথে নফলের নিয়ত করা যায় না--এটা নীতিগত কথা। তাই হাদীসে বর্ণিত ছাওয়ালের ছয় রোযা রাখার জন্য তার সাথে কাজা রোযার নিয়ত করা যাবে বা কাজা রোযার সাথে ছাওয়ালের ছয় রোযার নিয়ত করা চলবে না। বরং শাওয়ালের ছয় রোযা আলাদাভাবে রাখতে হবে এবং কাজা রোযা আলাদাভাবে রাখতে হবে।
এ ছাড়াও উত্তম হল, উক্ত ছয় রোযাকে রামাজানের ঈদের পর পরই রাখা এবং লাগাতারভাবে রাখা। কেননা, এতে বর্ণিত হাদীসের উপর পুরোপুরি আমল হয়। তবে কেউ যদি রামাজানের ঈদের পর পরই না রেখে আরো পরে সেই রোযা রাখেন এবং ছয় রোযা একসঙ্গে না রেখে কিছুদিন পর পর করে বা পুরো শাওয়াল মাস ভরে রোযাগুলো রাখেন, তাতেও সেই ফজীলত লাভের আশা করা যায়।
মোট কথা, যার যার সুযোগ-সুবিধা মত এক সাথে ছয় রোযা বা আলাদা আলাদা করেও রাখা জায়িয আছে। অর্থাৎ শাওয়ালের ভিতরে ছয়টি রোযা রাখলেই হবে। অবশ্য শাওয়াল মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে, তখন সেই ছয় রোযা রাখলে, তাতে হাদীসে বর্ণিত ফজীলত পুরোপুরি লাভ হবে না। তবে কেউ তখন রাখলে, কুরআনের বর্ণনানুযায়ী প্রতিটি নেক আমলের ১০ গুণ ছাওয়াব হিসেবে ভিন্নভাবে ৬০টি রোযা রাখার ছাওয়াব লাভের আশা করা যায়।
আর এ হিসেবেই রামাজান ও শাওয়ালের রোযা ছাড়াও প্রতিমাসে তিনদিন তথা চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার দ্বারা একবছরের রোযার সমান ছাওয়াব লাভ হবে বলে হাদীসে রয়েছে। তেমনিভাবে প্রতি সপ্তাহে দুইদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার বিশেষ ফজীলতের বর্ণনা হাদীস শরীফে রয়েছে।
═════════════════════
✓দ্বীনী এ পোস্টকে শেয়ার করে ইসলামের আলো পৌঁছে দিন প্রিয়জনদের কাছে।
✓দ্বীনী হিদায়াতের সমুজ্জ্বল আলোকরশ্মিতে আলোকিত হোক মুমিনদের হৃদয়।
✓সাথেই থাকুন
═════════════════════

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Abdul Kadir

Assalamu Alaikum

“ইসলামে সালাতের গুরুত্ব এতই সুমহান যে বসে থেকে সালাতের জন্য অপেক্ষা করাও একটি ইবাদাত!” — শাইখ সালিহ আল ফাওজান [ফাদাইল আস সলাহ, পৃ ১৩]